বিশ্বজুড়ে মানবতা ও শান্তি বার্তা-র উৎসব
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ:
২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৮:১৮ অপরাহ্ন
| দেখা হয়েছে ৭ বার
যিশুখ্রিস্টের জন্ম স্মরণে খ্রিস্টানদের সর্ববৃহৎ উৎসব: বিশ্বের নানা দেশে আজ (২৫ শে ডিসেম্বর) পালিত হচ্ছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন বা ক্রিসমাস। যিশুখ্রিস্টের জন্ম উপলক্ষে পালিত এ উৎসবকে ঘিরে সাজানো হয়েছে গির্জা, বাড়িঘর ও নানা জনপদ। উৎসবের আবহে মুখরিত হয়ে উঠেছে খ্রিস্টান সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
স্বর্গদূতের বার্তায় শুরু যিশুর আগমনের ইতিহাস: খ্রিস্টীয় সূত্র মতে, যিশুর জন্মের বহু আগেই স্বর্গদূত গাব্রিয়েল মাতা মরিয়মকে এক অলৌকিক সংবাদ জানান। তিনি বলেন মরিয়ম ঈশ্বরের পবিত্র শক্তিতে গর্ভবতী হবেন এবং পৃথিবীতে জন্ম নেবেন এক ত্রাণকর্তা, যাঁর আগমন মানবজাতিকে দেবে মুক্তির বার্তা। বিবাহ না হওয়ায় মরিয়ম বিস্মিত হলেও স্বর্গদূত তাঁকে আশ্বস্ত করেন যে, তিনি ঈশ্বরের বেছে নেওয়া ধন্য নারী।
মরিয়মকে নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার জন্য স্বর্গদূত জোসেফকেও দেখা দেন। এর কিছুদিন পর মরিয়ম ও জোসেফের বিয়ে সম্পন্ন হয় যাতে সমাজের চোখে মরিয়ম নিন্দনীয় না হন। স¤্রাটের আদেশে জন্ম-নিবন্ধনের জন্য তাঁদের বেথলেহেমে যেতে হয়েছে। সেখানে যাত্রাপথে কোনো সরাইখানায় জায়গা না পেয়ে তাদের আশ্রয় নিতে হয় একটি গোয়াল ঘরে। সেই রাতেই জন্ম নেন মানবজাতির ত্রাণকর্তা যিশুখ্রিস্ট।
মেষপালক থেকে রাজা সবাই ছুটে যান নবজাতকের কাছে: যিশুর জন্মের সংবাদ প্রথম পৌঁছে যায় বেথলেহেমের নিকটবর্তী মেষপালকদের কাছে। আকাশমন্ডলে স্বর্গদূতেরা আবির্ভূত হয়ে এই বার্তা জানান: আজ জন্ম নিয়েছেন শান্তির আগমনী বার্তাবাহক। এই অলৌকিক সংবাদে মেষপালকেরা আলো অনুসরণ করে গোয়াাল ঘরে উপস্থিত হন। তাঁরা নবজাতক যিশুকে উপহার ও আশীর্বাদ প্রদান করেন।
পরে পূর্বদেশ থেকে তিন জ্ঞানী তাঁকে দেখতে আসেন। যিশুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাঁরা উপহার দেন স্বর্ণ, কুন্দ্র (ধূপ) ও গন্ধরস যা প্রতীকীভাবে রাজত্ব, পবিত্রতা ও আত্মত্যাগকে নির্দেশ করে। এর পর থেকেই তাৎপর্যের দিকে থেকে যিশুর জন্মদিন বিশ্বব্যাপী বড়দিন উৎসব হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
আনন্দ, ভালোবাসা ও সাম্যের বার্তা ছড়ায় বড়দিন: আজকের বড়দিন শুধু ধর্মীয় উৎসবের পরিসরেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি মানবতার এক সার্বজনীন বার্তা। ঘর সাজানো, ক্রিসমাস ট্রি, প্রার্থনা, কেক, উপহার বিনিময়, ক্যারোল গান সব মিলিয়ে বড়দিন পরিণত হয়েছে শান্তি, ভালোবাসা ও মিলনের এক উৎসবে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অনেকেই এ দিনটিকে আনন্দ ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের সুযোগ হিসেবে দেখে থাকেন।
বাংলাদেশে বিভিন্ন গির্জায় ২৪ শে ডিসেম্বর গভীর রাতে শুরু হয় বড়দিনের মূল ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা। এই একই পর্ব অনুষ্ঠিত হয় পরের দিন ভোর বেলায়। মূল ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় অন্যান্য সামাজিক আনুষ্ঠানিকতা যা সারাদিনব্যাপী চলে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই নতুন পোশাক পরে, বড়দিনের কেক কাটা সহ পরিবার-পরিজন নিয়ে উপভোগ করেন উৎসবের বিশেষ মুহূর্ত।
শেষ কথা: যিশুখ্রিস্টের জন্মদিবস স্মরণে পালিত বড়দিন মানুষের মধ্যে শান্তি, ভালোবাসা, ক্ষমা ও সমতার শিক্ষা দেয়। অশান্ত বিশ্বে বড়দিনের এই বার্তা আরো বেশি প্রাসঙ্গিক যেখানে মানুষ খুঁজছে শান্তি ও সস্প্রীতির পথ। সবার জীবনে বড়দিন এনে দিক আলোর নতুন প্রত্যাশা।
সংক্ষিপ্ত কবিতা
গোয়াল ঘরে জন্ম নিলেন আমাদের ত্রাণকর্তা,
চলো সবাই দেখি তাঁকে, জানাই গভীর সম্মান।
অন্ধকারে আলো এনে দিলেন যিশু পৃথিবীজোড়া,
বড়দিন তাই ভরে ওঠে প্রেমে নতুন জীবনের গান।
(লরেন্স ডি. বিশ্বাস গ্লোরী স্কুল এ্যাণ্ড কলেজ -এর ৭ম শ্রেণীর ছাত্র এবং একজন ক্ষুদে শিল্পী ও লেখক)
আরও সংবাদ