ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১০:০৯ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫২ বার
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদীকে গুলির ঘটনাকে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসসহ বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল), জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি), এবি পার্টিসহ (আমার বাংলাদেশ পার্টি) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানী বিজয়নগরের কালভার্ট এলাকায় ওসমান হাদীকে গুলি করে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। গুলিতে ওসমান হাদির মস্তিষ্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওসমান হাদীর অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।
ওসমান হাদীর ওপর এই গুলির ঘটনার মাধ্যমে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কোনো অবস্থাতেই এই ধরনের ষড়যন্ত্রকে সফল হতে দিবো না। আঘাত যাই আসুক, যত ঝড় তুফান আসুক, কোনো শক্তিই আগামী নির্বাচনকে বানচাল করতে পারবে না।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দেশের আপামর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সবার সম্মিলিত শক্তি দিয়ে আমরা জাতির জন্যন একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করবো।
ওসমান হাদীর ওপর হামলার ঘটনার পর শুক্রবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য এবং আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি জরুরি বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
ওসমান হাদীকে গুলির ঘটনা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, এই হামলার পেছনে কারও কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে কি না ভেবে দেখতে হবে। কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে বিএনপির এক প্রার্থীর ওপর একই রকম ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা ঘটিয়ে অবশ্যই কেউ কোনো ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে।
তিনি আরও বলেন, ষড়যন্ত্র থেমে নেই। দেশের কল্যাণে আমরা যদি ঐকবদ্ধ না হই তাহলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। ষড়যন্ত্র থামানো যাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে, তাই নির্বাচন যেকোনো মূল্য নির্বাচন হতে হবে।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে বিএনপির ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচিতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে বলেন, ওসমান হাদীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে যে, সমাজের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের হাতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র রয়েছে।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের পাকড়াও করা নির্বাচন কমিশনের প্রধানতম দায়িত্ব। যদি এই কাজে কোনো ধরনের শিথিলতা প্রদর্শিত হয়, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের বুলি একেবারেই ফাঁকা বলে প্রমাণিত হবে।
জামায়াত আমির আরও বলেন, জনগণের জীবন, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা যেকোনো মূল্যে নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে জনগণ তাদের পাশে দাঁড়াবে।
নির্বাচন বানচাল করতেই ওসমান হাদীকে গুলি করা হয়েছে দাবি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ সই করা এক বিবৃতিতে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, গণতন্ত্রের পথচলাকে রুদ্ধ এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। তাই এসব নাশকতাকারী সন্ত্রাসীদের কঠোর হস্তে দমনের বিকল্প নেই।
এ বিষয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল লেখেন, যখন পুরো জাতি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন খোদ ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার নিন্দা জানানোর কোনও ভাষা নেই। আমি তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। আশা করি অন্তর্বর্তী সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সন্ত্রাস দমনে দৃঢ়ভাবে ব্যবস্থা নেবে।
ওসমান হাদীকে গুলির ঘটনায় আসন্ন নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট। দেশে নির্বাচন বানচাল করার একটি চক্রান্ত চলছে বলেও মনে করেন এই জোটের নেতারা।
এক যৌথ বিবৃতিতে জোটের মুখপাত্র ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম এবং আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, গত ১৬ মাসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। এমনকি সরকারের মধ্যে সেই প্রচেষ্টারও কোনো দৃশ্যমান পর্যায়ে ছিল না। পরিস্থিতি আতঙ্কজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।