ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৩:৪১ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪ বার
বিএনপির সঙ্গে চারটি আসনে সমঝোতা হয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) গুলশানের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আমির মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হক আজিজ, সহ-সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা নাজমুল হাসান কাশেমী, মাওলানা মজিবুর রহমান, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস তালুকদার এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা লোকমান মাজহারী।
এ সময় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা আজকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সঙ্গে যারা নির্বাচন করবেন, তার মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা আছেন এবং যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে যে সমস্ত রাজনৈতিক দল ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন এবং দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর যাদের ত্যাগ, রক্ত এবং প্রতিবাদ আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, তার মধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ অন্যতম। তাদের সঙ্গে আমাদের নির্বাচনী সমঝোতা হয়েছে। সেটা মহাসচিব আপনাদের বলবেন।
তিনি আরও বলেন, যাদের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা হয়েছে, তাদের আসনে বিএনপির কোনো প্রার্থী থাকবে না।
এবং সারা বাংলাদেশের অন্যান্য আসনগুলোতে তাদের কোনো প্রার্থী থাকবে না। আমরা সেই সমঝোতার মধ্যে উপনীত হয়েছি। আমরা আগামী দিনের নির্বাচনে সম্মিলিতভাবে সেই বৈতরনী পার হওয়ার জন্য আমাদের আরও যাদের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে, সেটা পরবর্তীতে আপনারা জানবেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে আমাদের আলাপ-আলোচনার সময় যেটা আপনারা জানতে পেরেছেন, আমরা সংবিধানের প্রস্তাবনায় মহান আল্লাহর ওপর আস্থা এবং বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করব যেটা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন।
কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন আমরা করব না, সেটা আমরা আগেই বলেছি। আর কওমী লাইনের, মাদ্রাসা থেকে যারা পড়েছেন, যাদের সর্বোচ্চ ডিগ্রি থাকবে, আমরা কিছুদিন আগে আমাদের কর্মসূচিতে বলেছি-আমাদের সামনের নির্বাচনী ইশতেহারে থাকবে যে ইমাম-খতিব-মোয়াজ্জেনদের জন্য আমরা রাষ্ট্রীয় ভাতা ও উৎসব ভাতার ব্যবস্থা করব। এটা একটা ট্রাস্ট আছে এই সংক্রান্ত, এটাকে আরও শক্তিশালী করে তাদের জন্য আমরা ব্যবস্থা করব রাষ্ট্রীয়ভাবে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ধর্ম শিক্ষক হিসেবে বিধি মোতাবেক নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার থাকবে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের আমির মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, আজকে আমরা আগামী নির্বাচনে যেহেতু দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় নেই, নির্বাচন নিয়ে দুই শিবিরে দুই ভাগ হয়ে গেছে।
আমাদের কাছে জাতীয়তাবাদী দল বেশি আস্থাভাজন। শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দল ও খালেদা জিয়ার দল, তাদের হাতে দেশ...
যার কারণে আমরা বিশ্লেষণ করে, চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা নির্বাচন তাদের সঙ্গে করব। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের সামনের রাস্তাটাকে ভালো রাখেন, ইসলামী মূল্যবাদে বিশ্বাসী দল এই জন্য জাতি ও দেশের কল্যাণের জন্য আমরা বিএনপির ওacপর আস্থা রাখতে পারি। তাদের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে, যদি তারা দেশ গঠনের সুযোগ পায়, সেভাবে দেশকে অগ্রসর করে নেওয়া, ঠিক সেভাবে ইসলামী অঙ্গনটাকে যেন গতিশীল করা হয়। আওয়ামী লীগ ১৫-১৬ বছরে ইসলামের যে অবস্থা ঘটিয়েছে, এখান থেকে যেন উত্তীর্ণ হতে পারি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম আমাদের দলের সঙ্গে সমঝোতায় নির্বাচন করবেন। তাদের এই উদ্যোগ যেন সফল হয়। বাংলাদেশ এখন একটা ট্রানজিশন পিরিয়ডে আছে। একটা ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট শাসন, যেখানে আমাদের সমস্ত মূল্যবোধগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছিল, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিল, সেখান থেকে বের হয়ে আমরা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি। নির্বাচনের পর আমাদের সঠিক পথে নিয়ে যাবে। এরমধ্যে দেখা যাচ্ছে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি-মহল এই ট্রানজিশন প্রসেসকে বাধাগ্রস্ত করতে চক্রান্ত করছে। এই চক্রান্তের মাধ্যমে নিহত শহিদ হওয়া ওসমান হাদির মাগফিরাত কামনা করছি। এই ট্রানজিশন পিরিয়ডে সরকারের ব্যর্থতার কারণে আইনশৃঙ্খলার যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল প্রফেসরের ইউনূসের সরকার অন্তত এই কয়েকটা মাস তাদের যোগ্যতার পরিচয় দেবেন।
নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি রাখার জন্য সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই যে তারা তাদের কথা রেখেছেন-’২৬ এর ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন এবং নির্বাচন কমিশন সেটাই করছেন। কিন্তু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করার জন্য তাদের আরও কার্যকরী ভূমিকা রাখা দরকার। নির্বাচন যেন সুষ্ঠু পরিবেশে হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন, সেটা আমরা আশা করি।
এ সময় তিনি জানান, সমঝোতার ভিত্তিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশকে সিলেট-৫ (মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক), নীলফামারী-১ (মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী), বি-বাড়িয়া-২ (মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব) এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ (মুফতী মনির হোসাইন কাসেমী) আসনগুলো ছেড়েছে বিএনপি। এসব আসনে তারা খেঁজুর গাছ প্রতীকে নির্বাচন করবেন।