ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

মনোনয়ন পেলেন জেল খাটা সাবেক দুই আ. লীগ নেতা

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৩:৪৫ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬ বার


মনোনয়ন পেলেন জেল খাটা সাবেক দুই আ. লীগ নেতা

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বাগেরহাটের চারটি আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তবে চারটির মধ্যে দুটি আসনে দলটির মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক দুই আওয়ামী লীগ নেতা। বিএনপিতে যোগ দিয়ে এক বছরের মধ্যে দুটি আসনের মনোনয়ন পাওয়ায় বেশিরভাগ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে নারাজ অনেকে।

 

ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও চায়ের দোকানে বিএনপির সমালোচনা ও নির্বাচনে ভরাডুবির কথা বলছেন অনেকেই। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে থাকা ছবি শেয়ার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

দলীয় সূত্র জানায়, বাগেরহাট-১ (ফকিরহাট-মোল্লহাট-চিতলমারী) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল। তিনি একই সঙ্গে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব ও বাংলাদেশ অশ্বিনী সেবা আশ্রমের সভাপতি।

এছাড়া তিনি চিতলমারী উপজেলার কলাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।

 

অপরদিকে বাগেরহাট-৪ (শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোটের সভাপতি সোমনাথ দে। তিনি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাবেক সভাপতি ছিলেন। এছাড়া মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন।

গত বছরের আগস্টে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন। এর আগে সোমনাথ দে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সংখ্যালঘু বিষয়ক উপদেষ্টা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ছিলেন। ২০১৮ সালের ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে বাগেরহাট-৪ আসনে নির্বাচন করেছিলেন। ২০১৯ সালের শেষের দিকে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০২২ সালে গঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কার্যনির্বাহী কমিটিতে তিনি ৩ নম্বর সদস্য হিসেবে স্থান পেয়েছিলেন।

 

দেশবিরোধী চক্রান্তের অভিযোগে কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল চলতি বছরের মার্চে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। অপর একটি মামলায় কারাভোগ করেছেন সোমনাথ দে। জেল থেকে বের হয়ে সনাতন ধর্মের অনুসারীদের নিয়ে ২০ আগস্ট বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন কপিল ও সোমনাথ।

গত শনিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয় থেকে প্রার্থী ঘোষণার পর আসন দুটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।

চিতলমারীর বাসিন্দা মোল্লা রাজু আহমেদ লিখেছেন, যতটা অসহায় বিগত ফ্যাসিস্ট আমলেও মনে হয়নি। আমাদের এ নির্বাচনী আসনে অনেক প্রবীণ-তরুন যোগ্য ত্যাগী নেতৃত্ব রয়েছে। যারা শেখ হেলালের বিরুদ্ধে নির্বাচনে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। তাদের মধ্য থেকে যেকোনো একজনকে নমিনি করলে এ আসনের মানুষ বিপুল ভোটে ধানের শীষকে নির্বাচিত করত। কিন্তু আজ এই নমিনেশের খবরটি শোনার পর থেকে নিজেকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে অভিযুক্ত মনে হচ্ছে। ‎কিসের প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে সংগঠন করেও নির্যাতিত নিপীড়িত মজলুম মানুষ গুলোকে হটাৎ করে নিজের পরিচয় হারিয়ে রোহিঙ্গা হিসেবে বেঁচে থাকতে হবে কিনা!

মো. শিমুল নামের একজন লিখেছেন, এই সেই আওয়ামী লীগের দালাল। যাকে ১ আসন থেকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। এটা মানুষ মেনে নেবে না। বিএনপির জনগণ এটা মেনে নেবে না। সারা বছর রাজপথে থেকে, সতেরো বছর ঘুমাতে পারিনি। এখন উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। কত টাকার বিনিময়ে নমিনেশন পেয়েছে এটা আমাদের জানতে হবে।

শেখ ইমরান নামের একজন মন্তব্য করেছেন, আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদেরও দল মনোনয়ন দিয়েছে।

শরণখোলার বাসিন্দা রাসেল আহমেদ ফেসবুকে সোমনাথ দের ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, জয় বাংলা, ধানের শীষে ভোট দিন। পোস্টের নিচে কেউ লিখেছেন, সাথে জাতীয় পার্টির স্লোগান যুক্ত করে দিন, কেউ লিখেছেন, পরবর্তী সিরিয়ালে কোন দল আছে।

মাসুম শেখ লিখেছেন, বিভিন্ন দলের জল খাওয়া সোমনাথ জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ হয়ে এখন বিএনপির প্রার্থী। আগামীতে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হলেও বিস্মিত হওয়ার কারণ থাকবে না।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এটিএম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বাইরে আমাদের আসলে করার কিছু নেই। তবে স্থানীয় নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। দীর্ঘদিন দল করে জুলুম-নির্যাতন সহ্য করার পর অন্যদলের কেউ এসে মনোনয়ন পাওয়ায় তারা ক্ষোভে ফুঁসছে। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে এসব বিষয় কেন্দ্রকে জানিয়েছি।

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালাম বলেন, আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এটি কীভাবে মেনে নেবে? তারা দুজনই সুবিধাবাদী এবং শেখ হেলালের নিকটতম অনুসারী ছিলেন। নেতাকর্মীরা সত্যিই হতাশ হয়েছেন। এছাড়া দীর্ঘদিন রাজপথে ছিলেন, এজন্য বাগেরহাট-২ আসনের মনোনয়নও পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন।

বাগেরহাট-১ আসনের মনোনয়নপ্রাপ্ত কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, আমি আগে কোনো দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। এটি আমার প্রথম রাজনীতি। দক্ষিণাঞ্চলের বড় মন্দিরের সভাপতি হওয়ায় নির্যাতিত হিন্দুদের অধিকার আদায়ে আমি সবসময় সোচ্চার ছিলাম। সেই কারণে এমপি-মন্ত্রীদের সঙ্গে আমার কথাবার্তা হয়েছে। এই ছবিগুলো দেখিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কেউ বলতে পারবে না আমি রাজনৈতিক মঞ্চে বক্তব্য দিয়েছি। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটির কাগজ ভিত্তিহীন দাবি করছে। পদ নিতে চাইলে অনেক বড় পদ পেতাম, ইউনিয়ন কমিটিতে কেন যাবো? মামলার বিষয়টিও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। উচ্চ আদালত থেকে গত সপ্তাহে রুল নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।

বাগেরহাট-৪ আসনের প্রার্থী সোমনাথ দে বলেন, আমি মনোনয়ন পাওয়ায় যারা চাঁদাবাজ, জুলুমকারী ও নির্যাতন করেছে, তাদের গাত্রদাহ হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ আমাকে সাদরে বরণ করেছেন। আমি জাতীয় পার্টি করেছি, আওয়ামী লীগ করেছি, ৫ আগস্টের পর জেল খেটেছি। আমার নামে এখনো তিনটি মামলা রয়েছে। এসব জেনেই দলের হাইকমান্ড আমাকে মনোনীত করেছে। নির্বাচিত হলে মোরেলগঞ্জ-শরণখোলায় কেউ এক কাপ চা অবৈধভাবে খেতে পারবে না।


   আরও সংবাদ